চুক্তি এবং চুক্তিপত্র কি?
১৮৭২ সালের চুক্তি আইন অনুযায়ী যদি বিশ্লেষণ করা হয় তবে, চুক্তি বলতে একজন সুস্থ মস্তিস্ক এর অধিকারী, প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে, আইনের দৃষ্টিতে সাবালক ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে কোন বস্তু কিংবা অর্থের বিনিময়ে অথবা বস্তুর বিনিময়ে আদান প্রদান করার জন্য লিখিত ভাবে অংগীকারাবদ্ধ হওয়ার যে প্রক্রিয়া দ্বারা একে অপরের সাথে একটা আইনানুগ সম্পর্কে লিপ্ত হয় তাকে চুক্তি বলে ।
তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত প্রযোজ্য হবে শর্তগুলি নিম্নে দেওয়া হলো –
১. চুক্তি সম্পাদনকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই আইনের দৃষ্টিতে সাবালক, সুস্থ মস্তিস্ক সম্পন্ন ব্যক্তি হতে হবে।
২.প্রত্যেক চুক্তিতে অবশ্যই একজন অপর একজনকে প্রস্তাব প্রদান করবে এবং অপর ব্যক্তি উক্ত প্রস্তাব গ্রহণে সম্মতি জ্ঞাপন করে কোন কিছু প্রতিদান করতে হবে।
৩. প্রতিদান ব্যতিত কোনো চুক্তিই কার্যকর হবে না ।
অপর দিকে বলা যায়, অংশীদারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির মধ্যের চুক্তির বিষয়বস্তু যে দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে তাকে অংশীদারি চুক্তিপত্র বলা হয়। অংশীদারি চুক্তিপত্রকে অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্র বা সংবিধান হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। অর্থাৎ যে দলিলে অংশীদারি ব্যবসায়ের গঠন, উদ্দেশ্য, পরিচালনা পদ্ধতি, অংশীদারদের অধিকার ও দায়দায়িত্ব প্রভৃতি লিপিবদ্ধ থাকে এবং সব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকে, তাকে অংশীদারি ব্যবসায়ের চুক্তিপত্র বলে।
চুক্তিপত্র কেন দরকার ?
১.ব্যবসা, লেনদেন, অঙ্গীকার অথবা অন্যান্য নানা প্রয়োজনে চুক্তি সম্পাদন করা লাগতে পারে।
২.বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া কিংবা বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনা-বেচার সময় চুক্তি করা প্রয়োজন পড়তে পারে ।
৩.দোকান ক্রয়-বিক্রয় বা ভাড়ার সময় চুক্তিপত্রের দরকার পড়তে পারে।
মানুষ লেনদেনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পণ্যদ্রব্য আমদানি-রপ্তানি, জমি-জমা ও ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়, নগদ অর্থ ব্যাংকে জমা রাখা, ব্যাংকে মেয়াদি হিসাব খোলা, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া, দোকান পজিশন ভাড়া দেওয়া-নেওয়া, জমি বন্ধক রাখা, নগদ অর্থ হাওলাত দেওয়া অথবা বিদেশ গমনের জন্য টাকা দেওয়া ইত্যাদি।
এছাড়াও, লেনদেনের ঋণ, পূঁজির জন্য চুক্তিপত্র সম্পাদন প্রয়োজন। এ ছাড়া ব্যক্তিগত যেকোনো ধরনের কাজে চুক্তিনামা দরকার হয়। তবে চুক্তিপত্র ইচ্ছামতো করলে হবে না । সবকিছুরই একটা নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে। সব ধরনের চুক্তির জন্যের কিছু আইনী বিধিবিধান রয়েছে। তা ঠিকঠাক পালন না করলে পরবর্তীতে উভয় পক্ষের মধ্যে ঝামেলা লেগে যেতে পারে। তাই আমরা যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে অবশ্যই চুক্তিবদ্ধ এবং চুক্তিপত্র এই দুই বিষয়ে বিস্তর ভাবে জানবো এবং সে অনুযায়ী কাজ করবো।
জমি ভাড়ার চুক্তিপত্রঃ
চুক্তিপত্রের শুরুতেই মহান সৃষ্টিকর্তার নামে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলে শুরু হবে।
পরবর্তীতে প্রথম পক্ষ (দাতা) এর নাম,পিতার নাম,ঠিকানা,গ্রাম,উপজেলা, থানা ইত্যাদি উল্লেখ থাকবে।
এবার, দ্বিতীয় পক্ষ (গ্রহীতা) এর নাম, পিতার নাম, ঠিকানা সহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করা থাকবে।
এরপরে, অপর পৃষ্ঠায় যেয়ে একটি শপথ নামা লেখা থাকবে এবং কিছু শর্তাবলী, যা উভয় পক্ষের আলোচবা সাপেক্ষে তৈরি হবে। সব কিছু উল্লেখ থাকার পর এবং জমির ভাড়া বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার কথা কথায় এবং অংকে লিখা থাকবে। প্রতি মাসের কত তারিখের মধ্যে টাকা জমা দিতে হবে সে বিষয়ে ও লিখা থাকবে। পরবর্তীতে প্রথম পক্ষ এবং দ্বিতীয় পক্ষের স্বাক্ষর এবং নাম লিখিত হবে।
এই ধাপের পরে, শেষ ধাপে, সাক্ষী প্রদানকারী তিন জন ব্যক্তির নাম,ঠিকানা, যাবতীয় তথ্য লিখিত থাকবে এবং স্বাক্ষর থাকবে।
এছাড়াও যদি দুই পক্ষের মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট কিছু নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে কিংবা জমি সংক্রান্ত কোনো সমস্যা লিপিবদ্ধ করার দরকার পড়ে তাহলে আলাদা করে পয়েন্টে সেটা উল্লেখ করা থাকবে। তবে সেক্ষেত্রে তা উভয় পক্ষের স্বাক্ষরের আগেই উল্লেখিত থাকবে।