হোস্টিং ও ডোমেইন নিয়ে নতুন উদ্যোক্তাদের প্রায়ই মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে দেখা যায়। কষ্টার্জিত টাকা ভুল-ভাল খরচ হয়ে গেলে খারাপ লাগাই স্বাভাবিক। তাই আমি চেষ্টা করব নতুনদের এই ব্যাপারে কিছু ধারণা দিতে। এখানে যা বলব তা শুধু নতুনদের কথা মাথায় রেখে লিখা।
ডোমেইন কিনতে গেলে .com ডোমেইনের দাম ১০০০-১৫০০ টাকা পড়বে বাংলাদেশী কোম্পানিগুলোতে। এর চেয়ে কমে কিনতে গেলে সাধারণত কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া থাকে। তাই এই ডোমেইনের দাম নিয়ে গড়িমসি না করাই ভাল। দেশের কোন সাইট থেকে কিনতে না চাইলে Namecheap থেকে কিনতে পারেন। GoDaddy এর পরে নেমচিপই সবেচেয়ে বেশি ডোমেইন বিক্রি করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে গো ড্যাডি পছন্দ করি না। নেমচিপ থেকে ডোমেইন কিনতে গেলে ৯ ডলারে পাবেন। এর থেকে কম মনে হয় ভাল কোন কোম্পানি দিবে না। এই কারণে ডোমেইন জগতে নেমচিপের আলাদা পরিচিতি আছে। তবে ডলার পেমেন্ট করার মত কার্ড না থাকলে দেশ থেকেই কিনতে পারেন। দেশে অনেক কোম্পানিই ভাল সার্ভিস দিচ্ছে। আপনি চাইলে XeonBD থেকে নিতে পারেন।
হোস্টিং কেনার আগে ঠিক করুন আপনার দর্শক কারা। যদি আপনার সাইটটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য হয়, তাহলে বাংলাদেশি কোন ডাটা সেন্টার লাগবে। এতে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা খুব দ্রুত আপনার সাইটটি লোড করতে পারবেন। বাংলাদেশে ডাটা সেন্টার দেখভাল করা ঝামেলার বিধায় অনেক হোস্টিং কোম্পানি আমেরিকা-ইউরোপে ডাটা সেন্টার রাখেন। কিন্তু মনে রাখবেন ইউরোপ থেকে একটা তথ্য বাংলাদেশে আসতে একটু হলেও সময় বেশি লাগবে। আহামরি কোন পার্থক্য হবে না। তবে বাংলাদেশি ডাটা সেন্টার ব্যবহার করা বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে খুবই লাভজনক।
হোস্টিং কিনতে কেমন খরচ হতে পারে? আমি দেশি এবং বিদেশি হোস্টিং ব্যবহারের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, দেশের খরচ তুলনামূলক কম। একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হল নেমচিপ। নেমচিপের বেসিক প্যাকেজের দাম অনেক কম। আমি কয়েক বছর ধরে দেখছি ওরা বার্ষিক ১৮ ডলার ফিতে হোস্টিং সার্ভিস দিচ্ছে। এতে যারা নতুন, তারা সহজেই তাদের ওয়েবসাইট হোস্টিং শুরু করতে পারে। কিন্তু যাদের ইংরেজি নিয়ে সমস্যা আছে, তাদের জন্য দেশি কোম্পানিগুলো ভাল হবে। কোন সমস্যা হলেই সহজেই সমাধান করতে পারবেন। নেমচিপের কাস্টমার সার্ভিস অবশ্য দারুণ। এবার আপনার সিদ্ধান্ত।
আর একটা কথা, প্রথম বছরের রেট কিন্তু দ্বিতীয় বছরে বেড়ে যেতে পারে। সেটা ছোট করে হলেও লেখা থাকবে। দেখে নিবেন। আর বাংলাদেশে যে সার্ভিস আমি ব্যবহার করি তার নাম XeonBD। খুবই ভাল সার্ভিস। আন্তর্জাতিক মানের। ওদের বাংলাদেশে ডাটা সেন্টার আছে। অন্য দেশেও আছে। এই মাত্র খোঁজ নিয়ে দেখলাম ওদের একদম বেসিক প্যাকেজের দাম মাসিক ১৫০ টাকা।
এরপর যে বিষয়টি মাথায় রাখবেন তা হল আপনার হোস্টিং প্যাকেজে কয়টি ওয়েবসাইট (Domain) হোস্ট করা যাবে। আপনার যদি একাধিক সাইট থাকে তাহলে এই সুবিধা খুবই দরকারি। নেমচিপের ব্যাসিক প্যাকেজে ৩ টা সাইট হোস্ট করা যায়। যেখান থেকেই কিনুন, তথ্যটা লিখা থাকবে।
SSL Certificate খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার সাইটে যদি নিরাপত্তাসূচক https প্রটোকল চান, তাহলে আপনার হোস্টিং প্যাকেজের সাথে SSL Certificate ফ্রি আছে কিনা দেখে নিবেন। এখন ফ্রিতেই এই সার্টিফিকেট পাওয়া যায়, তাই কোন প্যাকেজে ফ্রি না থাকলে কিনবেন না।
আপনি কত বড় সাইট বানাবেন তার উপর ভিত্তি করে হোস্টিং স্পেস নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সাধারণত বেসিক প্যাকেজগুলোতে কমপক্ষে ১ জিবি স্পেস থাকে। একটা-দুইটা ছোট ওয়েবসাইটের জন্য এই স্পেস যথেষ্ট। তবে আপনার সাইটের সাইজের উপর ভিত্তি করে বেশি স্পেস নিতে পারেন।
ফ্রি ইমেইল একাউন্ট দেয় কিনা দেখে নিবেন। আপনি যদি চান যে আপনার ইচ্ছা মত একটা মেইল এড্রেস বানাবেন, সে ক্ষেত্রে এই সুবিধাটা জরুরী। যেমনঃ sakib@coolesttechbd.com, এখানে coolesttechbd.com হল আপনার সাইট আর sakib আপনার দেওয়া ইউজারনেইম।
আরও কিছু ব্যাপার আছে, টেকনিক্যাল। আমি সেগুলোতে গেলাম না। বিশেষ করে নতুনদের তাতে সমস্যা হবে। তবে এটা বলতে পারি কোন ভাল কোম্পানিতে হোস্টিং কিনলে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আপাতত ভাবতে হবে না। যেমন, Bandwidth (আপনার সাইটের দর্শক বেশী হলে এটা বেশি লাগবে), Processor, Ram (এগুলো ভাল হলে আপনার সাইট দ্রুত সাড়া দিবে), SSD (আপনার সাইটের গতি বাড়াবে), cPanel (সবচেয়ে জনপ্রিয় CMS, সাইট সেট আপ করতে সুবিধা হবে), LiteSpeed cache (বিশেষ প্লাগিন ব্যবহার করলে WordPress এ গতি অনেক বেড়ে যাবে), Auto Backup (সাইটে কিছু হলে সব আবার ফিরে পাবেন),
শেষমেশ বলি, যে কোম্পানিতেই হোস্টিং কিনুন, আগে নেটে রিভিউ দেখে নিবেন। ফেসবুকে রিভিউ দেখে নিতে পারেন। আর বাংলাদেশি সার্ভিস বলে অবহেলা করবেন না। দেশের সার্ভিস গুলো এখন অনেক উন্নত। গুগলে সার্চ দিলে অনেক কোম্পানি পাবেন যারা ভাল সার্ভিস দেয়। তবে অহেতুক টাকা খরচ করার দরকার দেখি না। দেশি সার্ভিসগুলোর মধ্যে XeonBD এবং EXONHOST আমার কাছে ভাল লেগেছে।
ডোমেইন নিয়ে কিছু কথা
যারা নতুন শুরু করতে চাচ্ছেন এবং অনেক অল্প টাকায় ডোমেইন কিনতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য ভাল হবে .xyz ডোমেইন কিনা। তবে .com ডোমেইন কেনা সবদিকে দিয়েই বেস্ট। নেইমচিপে সাধারণত ৮.৮৮ ডলারে .com ডোমেইন পাওয়া যায়। আরেকটা কম দামি ডোমেইন হল .info। এগুলো কমদামি হলেও এদের মোটামুটি একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। বিশেষ করে অল্প বয়সী অনেককেই দেখি .xyz ডোমেইন দিয়ে শুরু করতে।
এটা মনে করার কারণ নাই যে গুগল কোন বিশেষ ডোমেইন নেইমকে পছন্দ করে। তবে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা একটু হলেও .com ডোমেইনে বেশি ভরসা পায় বলে আমার মনে হয়।
ডোমেইন কেনার ব্যাপারে বলিঃ আপনি যে সাইটে ডোমেইন কিনছেন, পারলে সেখানেই হোস্টিং কিনুন। নতুনদের সাইট সেটাপ করতে অনেক সুবিধা হবে। ডোমেইন ও হোস্টিং যদি একই কোম্পানির কাছে কিনেন, তাহলে কাস্টমার সার্ভিসদাতারাও আপনাকে সহজে সাহায্য করতে পারবে। আমি যখন প্রথম ডোমেইন কিনি, তখন হোস্টিংও একই সাইট থেকে কিনেছিলাম। আমার পছন্দের প্রোভাইডার ছিল NameCheap (এটা অবশ্য আপনারা এতক্ষণে বুঝে গেছেন।
হোস্টিং কত প্রকার
- শেয়ারড হোস্টিং (Shared Hosting)
- ভিপিএস হোস্টিং (VPS = Virtual Private Server)
- ডেডিকেটেড হোস্টিং/ সার্ভার (Dedicated Hosting/Server)
- ক্লাউড হোস্টিং (Cloud Hosting)
শেয়ারড হোস্টিংঃ এই পোস্টে আমি যত কথা বলেছি সবগুলো মূলত শেয়ারড হোস্টিং নিয়ে। নতুন থেকে শুরু করে মোটামুটি অভিজ্ঞ ওয়েবসাইট মালিকরা শেয়ারড হোস্টিং পছন্দ করে। একটি সার্ভিস প্রোভাইডার তাদের সার্ভারের ডিস্ক স্পেস থেকে আপনাকে খানিকটা ভাড়া দিচ্ছে আপনাকে। ঐ SSD আবার অন্যরাও ব্যবহার করছে কিছু অংশ ভাড়া নিয়ে। এই ব্যবস্থার একটা খারাপ দিক হল কোন সাইটে যদি দর্শকের চাপ পড়ে তাহলের সেটার কারণে অন্য সাইটগুলোও ধীরগতির হয়ে যাবে। যাই হোক, এটা খুবই জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। শেয়ারড হোস্টিং এর দাম সবচেয়ে কম। নবীনদের জন্য আদর্শ ব্যবস্থা।
ভিপিএস হোস্টিংঃ ভিপিএস হোস্টিংটা মূলত প্রফেশনালদের জন্য। যাদের ওয়েবসাইটে দর্শক অনেক বেশি হয়, তাদের জন্য এটা ঠিক আছে। ভিপিএস হোস্টিং এ একজন গ্রাহক পুরো সার্ভারের একতা অংশ ভাড়া নেনে। হ্যাঁ, এটিও এক ধরণের শেয়ারড হোস্টং কিন্তু এখানে প্রত্যেক গ্রাহকের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ হার্ডওয়্যার ঠিক করা থাকে। এই গন্ডিকেই Virtual Private Server বলে। এর বিশেষ সুবিধা হল, যদি কোন গ্রাহক তার জন্য নির্ধারিত হার্ডোওয়্যার, যেমন র্যাম বা মেমরি অতিক্রম করে, তাতে অন্য কোন গ্রাহকের ওয়েবসাইট পারফর্মেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ প্রত্যেক গ্রাহকের জন্য হার্ডওয়্যার ভাগ করে দেওয়া আছে। ভিপিএস হোস্টিং ব্যবহারের বিশেষ সুবিধা হল, যে কোন সময় হার্ডওয়্যারের ক্ষমতা বাড়ানো যায়। এটা অনেকটা নিজস্ব সার্ভারের মতই, কিন্তু শেয়ারড হোস্টিং এর মত সবকিছু রাতারাতি পরিবর্তন করা যায়। Namecheap এ কিনতে গেলে সর্বনিম্ন ২০ ডলার খরচ পড়বে মাসে।
ডেডিকেটেড সার্ভারঃ এটা বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য। একটা সার্ভারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার পুরোটাই গ্রাহকের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এটি ব্যবহারের উদ্দেশ্য হল, ঐ গ্রাহকটি তারা সার্ভার তার মত করে সেটাপ করতে চায়। এতে যে কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজন তা তার থাকতে হবে। সার্ভারের যেকোন সমস্যার সমাধান তার নিজের করতে হবে। অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করা, সিকিউরিটি নিশ্চিত করা ইত্যাদি গ্রাহকপক্ষকে করতে হবে। Namecheap থেকে কিনতে গেলে ৬০ ডলার দিতে হবে মাসে ব্যাসিক প্যাকেজের জন্য।
ক্লাউড হোস্টিংঃ হালের ক্রেজ ক্লাউড হোস্টিং। একটা নির্দিষ্ট সার্ভারে আবদ্ধ না থেকে কয়েকটা সার্ভার মিলে একসাথে কাজ করে এখানে। কোন সার্ভারের পারফরমেন্সে সমস্যা হলেও অন্য সার্ভার সেখানে সার্ভিস দিতে পারে। এই কারণে ক্লাউড হোস্টিং দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।